প্রাথমিক তথ্য- বাংলাদেশে বহু রকমের সবজি চাষ হয়ে থাকে। সব সবজিরই চারা উৎপাদন করার প্রয়োজন হয় না। চারা রোপণের উপযুক্ত হলে দেরি না করে রোপণ করতে হয়। বয়স্ক এবং অনুপযুক্ত চারা রোপণ করলে ফলন কমে যায়। জমির মাটিতে উপযুক্ত রস যেন থাকে। বীজতলার মাটিতে চারার গোড়া যতটুকু গভীরে ছিল রোপণের সময় ততটুকু গভীরে রোপণ করতে হয়। সারি টেনে নির্দিষ্ট দূরত্বে চারা লাগিয়ে চারার গোড়ার মাটি সামান্য চেপে দিতে হয়। মাটি শুল্ক হলে ঝাঝরি দিয়ে সেচ দিতে হয় এবং রোদের সময় ছায়ার ব্যবস্থা করতে হয়। মাটিতে চটা ধরলে নিড়ানি দিয়ে তা ভেঙ্গে দিতে হয়।
প্রয়োজনীয় উপকরণ
১। বীজতলা ও রোপণ উপযোগী সবজির চারা ২। নিড়ানি ৩। চারা উঠানোর জন্য বাঁশের চটা ৪। ঝাঝরি ৫। কলার খোল ৬। খাতা কলম ।
কাজের ধাপ
চারা শনাক্তকরণ
১. বীজতলার পাশে দাঁড়ায়ে চারা স্বাভাবিক আকারের কিনা দেখতে হবে।
২. চারায় ৪-৫টি হতে অনধিক ৬টি পাতাযুক্ত হয়েছে কীনা দেখতে হবে।
৩. রোগের সবরকম লক্ষণ থেকে চারা মুক্ত আছে কীনা দেখতে হবে।
৪. চারার কাণ্ড, পাতা ও গুচ্ছমুলের বৃদ্ধি প্রায় সমানুপাতিক কিনা দেখতে হবে।
৫. কাণ্ড পুরু ও সতেজ কিনা দেখতে হবে।
৬. পাতা স্বাভাবিক সবুজ আছে কিনা পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
৭. চারার কষ্টসহিষ্ণুতা করে নিতে হবে। তাতে চারায় শ্বেতসার সঞ্চিত হয়।
৮. চারা স্থানান্তরজনিত আঘাত কাটিয়ে উঠার মত যোগ্য কিনা দেখতে হবে।
উল্লিখিত গুণাগুণ থাকলে সে সমস্ত চারা রোপণের জন্য শনাক্ত করার যায়।
রোপণ পরবর্তী পরিচর্যা
১. চারা বীজতলা হতে উঠায়ে রোপণ পরবর্তী চারার গোড়ায় ৩-৪দিন সকালে প্রয়োজনে বিকালেও ঝাঁঝরি দিয়ে হালকাভাবে সেচ দিতে হবে।
২. চারা রোপণ করে গোড়া সামান্য চেপে দিতে হবে এবং চারা থেকে গেলে সোজা করে দিতে হবে।
৩. চারা রোপণের পর প্রখর রোদের ভাব থাকলে ৫-৭ দিন পর্যন্ত দিনে ছায়া করে দিতে হবে।
৪. চারা রোপণ হতে ফসল সংগ্রহ পর্যন্ত মালচিং, আগাছা দমন, শূন্যস্থান পূরণ, অংগ হাটাই, পরাগায়ন, করা ইত্যাদি সুচারুরূপে করতে হবে।
৫. কাজের প্রতিটি বিষয় খাতায় ধারাবাহিকভাবে লিখতে হবে
প্রাথমিক তথ্য- ভালো কম্পোষ্ট তৈরির জন্য কার্বন, নাইট্রোজেন ও অনুজীবের উৎসগুলো একত্রীকরণ করা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কম্পোষ্ট এক ধরনের জৈব সার। গাছপালা তাজা বা শুকনো, লতাপাতা, খড়কুটা, তরিতরকারির অবশিষ্টাংশ, কচুরিপানা, সবুজ ঘাস, পশুপাখির মলমূত্র, কশাইখানার বর্জ্য ইত্যাদি কম্পোষ্ট তৈরিতে প্রয়োগ করা যায়। কম্পোষ্ট তৈরিতে বিষাক্ত দ্রব্য (বিষকাঁটালি, তামাক), অপচনশীল রাসায়নিক দ্রব্যাদি (প্লাষ্টিক ও প্লাস্টিকজাতীয় পদার্থ), কার্বন বেশি আছে এমন গাছ (বাঁশপাতা, ইউক্যালিপটাস, কলা ও হলুদের পাতা) এবং রোগাক্রান্ত গাছপালা ব্যবহার করা মোটেই উচিত নয়।
গাদা পদ্ধতিতে কম্পোষ্ট তৈরির জন্য নির্দিষ্ট মাপ (৩ মিটার x ১.২৫ মিটার ×১.৫ ২.০০ মিটার) দিয়ে সেখানে আবর্জনা, ও অন্যান্য উপকরণ স্তরে স্তরে সাজাতে হবে। স্তুপের উপরে মাটি ও কাঁচা গোবরের পুরুক্তর করে লেপে দিতে হবে। পচনক্রিয়ার জন্য মাঝে মাঝে উপর দিয়ে ছিদ্র করে পানি দিতে হবে। স্তুপের উপরে চালা দিতে হয়। ৩-৪ মাসে কম্পোষ্ট তৈরি করে ব্যবহার করা যায়। পঁচনক্রিয়া ঠিকমত হলে ১.৫-২ মাসেও কম্পোষ্ট তৈরি হয়।
প্রয়োজনীয় উপকরণ-
১। খড়কুটা, আবর্জনা, লতাপাতা ইত্যাদি জৈব উপকরণ, ২। পশুপাখির মলমূত্র ও অন্যান্য বর্জ্য ৩। কাঁচা গোবর। ৪। ভিটা মাটি ৫। বাঁশ ৬। চাটাই ৭। কোদাল ৮। চালা ৯। টেপ (মাপার ফিতা) ১০। রকী, ১১। খাতা কলম।
কাজের ধাপ-
১. কম্পোষ্ট গাদা তৈরির জন্য উঁচু স্থানে ৩ × ২ মিটার দৈঘ্য x প্রস্থ) মেপে চিহ্ন করতে হবে।
২. চারকোনায় ৪টি বাঁশে খুঁটি পুঁতে রশি দিয়ে চাটাই দিয়ে আয়তাকার ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে।
৩. এই ক্ষেত্রের ভিতর ঘাস, লতাপাতা, প্রাণিজ আবর্জনা, গরু ছাগলের ঘরের ঝাড়ুর ময়লা জাতীয় সব পঁচনশীল দ্রব্য ফেলে প্রথমে ৩০ সেমি. স্তর বানাতে হবে।
৪. এ স্তরের উপরে ১ কেজি গুড়া খৈল, কাঁচা গোবর, পচা মাটি ইত্যাদি দিয়ে ৫ সেমি. পুরু স্তর বানাতে হবে ।
৫. এরপর পানি ছিটিয়ে ভিজিয়ে দিতে হবে।
৬. এভাবে উপকরণ প্রাপ্তির ওপর নির্ভর করে ৩ থেকে ৬টি স্তর পর পর একই নিয়ম অনুসরণ করে সাজাতে হবে।
৭. সর্বশেষ স্তরের উপর পলিথিন/খড় দ্বারা চালা তৈরি করে দিতে হবে।
৮. গাদা যদি শুকিয়ে যায় তাহলে মাঝে মাঝে উপর দিয়ে ছিদ্র করে পানি দিতে হবে, যাতে ঠিকমত পচন ক্রিয়া চলতে পারে।
৯. গাতা তৈরির ১ মাস পর গুরগুলো ওলটপালট করে দিলে পচন ক্রিয়া সমভাবে হবে এবং ১.৫-২ মাসে সম্পূর্ণ পঁচে কম্পোষ্ট ব্যবহার উপযোগী হবে।
ব্যবহারঃ কম্পোষ্ট তৈরি হলে গাদা ভেঙ্গে শুকিয়ে গুড়া করে প্যাকেটজাত / বস্তায় ভরে রাখা যাবে। তবে খুব বেশি শুকানো উচিত নয়। পচনের ফলে কালচে রং ধারণ করে এবং ঝুরঝুরে হয়। কোন দুগন্ধ থাকে না এবং হাতে নিয়ে মুঠি করে চাপ দিলে স্পঞ্জের মত মনে হয়। এতে নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশসহ অন্যান্য উপাদান থাকে। এটি সবজির জন্য অত্যন্ত উন্নতমানের জৈব সার।
প্রাথমিক তথ্য
ফসলের বীজ বপন/চারা রোপণের পরে ফসলের বৃদ্ধি পর্যায়ে সার প্রয়োগ করাকে উপরি প্রয়োগ বোঝায়। গাছের জন্য বেশি পরিমাণে লাগে এবং গ্রহণ উপযোগী হতে সময় লাগে এরূপ সারগুলো মৌল সার হিসেবে চাষের সাথে প্রয়োগ করা হয় (টিএসপি, পটাশ, দস্তা, চুন, জিপসাম, বোরণ ইত্যাদি। তবে, নাইট্রোজেন ও পটাশ সার, বোরণ ও দস্তা সার গুলিয়ে, ছাই, পঁচা খৈল ও গোবর সার উপরি প্রয়োগ করা যায়। স্বল্প মেয়াদি ও পাতা জাতীয় সবজিতে নাইট্রোজেন ব্যতিত সব সার মৌল এবং নাইট্রোজেন সার কয়েক কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হয়। ফুল, মূল ও ফল জাতীয় সবজিতে উপরি প্রয়োগের সার ২-৩ টি কিস্তিতে প্রয়োগ করলে বেশি সুফল পাওয়া যায়।
প্রয়োজনীয় উপকরণ
১। পাতা, মূল ও ফল জাতীয় সবজি ক্ষেত ২। বিভিন্ন ধরনের সার ৩। সার ছিটানোর পাত্র ৪। খাতা কলম
কাজের ধাপ
পাতাজাতীয় সবজি
১। পালং ও লালশাক, সিলারী, ধনেপাতা, বাঁধাকপি, মূলা শাক ইত্যাদি পাতাজাতীয় সবজি ক্ষেত নিতে হবে।
২। পাতাজাতীয় সবজিতে ফসল তোলার পূর্ববর্তী ৩০ দিন খাদ্য পরিশোষণ হার বেশি। তাই এ সময়ে ২-৩ কিস্তিতে সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
৩। সার গাছের পার্শ্বে, উপর হতে ছিটিয়ে গোড়ায় ব্যান্ড আকারে, সারির পাশ দিয়ে, মাদায় চারিদিকে, স্প্রে করে দেওয়া যাবে। তবে সম্পূর্ণ ইউরিয়া ২-৩ কিন্তিতে, পটাশ মোট সারের অর্ধেক ২ কিস্তিতে খৈল/ছাই/গোবর ৫০% ১-২ কিস্তিতে উপরি প্রয়োগ করতে হবে
মূলজাতীয় সবজি
১। ফসল তোলার ৪৫ দিন আগে ১৫-২০ দিন পর পর ২-৩ কিস্তিতে সারির পাশ দিয়ে ছিটিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
২। সবজির পাশ দিয়ে লাইন টেনে তাতে সার দিয়ে মাটি দিয়ে বা মাটি তুলে গোড়া বেধে দিতে হবে।
৩। ২ কিস্তিতে সার দিলে লাইনের দুইপাশ দিয়ে ২ বারে দিতে হবে, তাতে সারের কার্যকারিতা বেশি হবে। সার প্রয়োগ সম্পর্কে তাত্ত্বিক অংশে উল্লেখ আছে।
ফলজাতীয় সবজি- মূল জাতীয় সবজির অনুরূপ।
সারের উপরি প্রয়োগের সময় জমিতে রসের ঘাটতি থাকলে সেচে দিতে হবে। তাতে সার বেশি কাজে লাগবে ।
প্রাথমিক তথ্য- বীজ আলু সব সময় ছোট (২০ গ্রাম) আকারের পর্যাপ্ত পরিমাণ পাওয়া যায় না। কিন্তু ছোট বীজ বেশি ভালো। সেক্ষেত্রে বড় আকারের বীজ আলুকে কেটে টুকরো করে রোপণ করা যায়। কাটিং করার সময় টুকরার ওজন, আকার, চোখের সংখ্যা লক্ষ রাখতে হয়। এছাড়াও কাটিংকৃত আলুটি যাতে রোগে আক্রান্ত না হতে পারে সেজন্য কাটার যন্ত্রটি শোধন করে নিতে হয়। আলুর কর্তিত স্থানটি ঠিকমত শুকানো হলে শক্ত চটার ন্যায় হবে। তাতে রোগজীবাণু ঢুকতে বাধাগ্রস্থ হবে । কাটা আলু কিউরিং করার পর অঙ্কুর গজানোর জন্য খড়কুটা দ্বারা জাগ দিতে হয়। এতে শক্তিশালী অঙ্কুর বের হয়।
প্রয়োজনীয় উপকরণ-
১। বীজ আলু, ২। চাকু, ৩। ছাই ৪। ডেটল/স্যাভলন ৫। খড়কুটা, ৬। ডালা, ৭। খাতা কলম।
কাজের ধাপ
১. বীজ প্রস্তুতকরণের জন্য ২০ গ্রাম ওজনের আস্ত আলু বা ৩-৪ সেমি, অর্থাৎ ৩০ গ্রামের বীজ আলুকে দুটুকরা। এবং ৪ সেমি. এর বড় অর্থাৎ ৪০ গ্রামের বড় আলুকে দু'এর অধিক টুকরো করে কাটতে হবে।
২. বীজ আলু কাটার আগে চাকু, ছুরি বা বটিকে স্যাভলন/ডেটল দ্বারা মুছে জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে।
৩. আলুর কাটিং এর প্রতি টুকরাতে কমপক্ষে ২টি চোখ থাকতে হবে।
৪. আলু কাটর পর কাটাস্থানে গোবরের শুকনো ছাই মাখায়ে ছায়ায় রেখে শুকাতে হবে।
৫. কাটিংগুলো শুকানো হলে কাটাস্থানে শক্ত চটা ধরবে। এরপর এগুলো ৫-৭ সেমি. পুরু করে বিছিয়ে খড়কুটা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
৬. আলু কাটিং এর সময় পুরাতন অঙ্কুর ভেঙ্গে দিতে হবে।
৭. কিউরিং করার পর বীজ নিম্নে বর্ণিত দুরত্বে লাগাতে হবে।
দূরত্বঃ- সারি হতে সারি = ৬০-৭৫ সেমি.
বীজ হতে বীজ = ২০-২৫ সেমি.
নালার গভীরতা ৫-৭ সেমি.।
৮. আলু রোপণ সম্পর্কে তাত্ত্বিক অংশে বিস্তারিত উল্লেখ আছে ।
প্রাথমিক তথ্য- মাটি দোঁআশ ও এঁটেল দোঁআশযুক্ত উঁচু ও মাঝারি উঁচু এবং নিষ্কাশন সুবিধা আছে এমন জমি উত্তম। এ সমস্ত সবজি কিছুটা ছায়াময় স্থানে জন্মালেও পর্যাপ্ত সূর্যালোকে যেখানে পড়ে সে সমস্ত স্থানে ফলন বেশি হয়। সবজি লাইনে বপন করা যায়। আবার অনেক সবজি মাদা করে মাদায় বীজ রোপণ করা যায়। মাদায় গর্ত করে রোপণ করা হয়। চারা সাধারণত বিকেলে বা মেঘলা দিনে যে কোন সময় রোপণ করা যায়। এতে চারার মৃত্যু হার কম হয়। চারা রোপণের পর জমি শুকনো থাকলে ঝাঁঝরি দিয়ে পানি দিতে হয়। সূর্যের আলো প্রখর হলে চারায় ছায়ার ব্যবস্থা করতে হয়।
প্রয়োজনীয় উপকরণ : ১। সবজির বীজ, ২। নিড়ানি ৩। কোদাল, ৪ কাঠি ৫। টেপ ৬। চাকু ৭। ছায়ার জন্য চালা, ৮। ডালা/বস্তা ৯। জমির বন্ধুরতার তথ্য ১০। খাতা কলম।
কাজের ধাপ
১. দোঁআশ বা এঁটেল দোঁআশ মাটি, উঁচু বা মাঝারি উঁচু এবং সেচ ও নিকাশের সুবিধাযুক্ত জমি নির্বাচন করতে হবে।
২. সবজির জন্য নির্দিষ্ট দূরত্বে লাইন বা মাদা তৈরি করতে হবে।
সবজির নাম | দূরত্ব (সেমি.) |
গীমা কলমি | লাইন হতে লাইন ১৫ সেমি. চারা হতে চারা ১০ সেমি. |
কাঁকরোল | মাদা হতে মাদা উভয়দিকে ৩ মিটার, মাদায় গর্ত ৭৫ × ৭৫ সেমি. চওড়া ও গভীর |
ধুন্দল | মাদা হতে মাদা ২ মি., মাদার লাইন হতে লাইন ১ মিটার, গর্ত ৭৫ × ৬০ সেমি. |
পুঁইশাক | লাইন হতে লাইন ৪৫ সেমি, চারা হতে চারা ৩০ সেমি. |
পাজর | লাইন হতে লাইন ৩০ সেমি. চারা হতে চারা ৫ সেমি. |
৩. গীমা কলমি ও পুঁইশাক বীজ ৩-৫ সেমি. গভীর নালা টেনে ঐ নালায় নির্দিষ্ঠ দূরত্বে বীজ রোপণ করে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
৪. গাজর বীজ বপনের জন্য ২-৩ সেমি. গভীর করে নালা টেনে নালায় বীজ হালকা করে বপন করতে হবে এবং চারা গজালে ৫ সেমি. পর পর গাছ রেখে পাতলা করে দিতে হবে।
৫. গাজর বীজ বপনের সময় বীজের ওজনের ৯-১০ গুণ পর্যন্ত ছাই/বালি মিশিয়ে নিলে সমভাবে বীজ বপন করা সহজ হবে।
৬. গীমা কলমি, পুঁইশাক ও গাজর বেড করে বপন করতে হবে তাতে সেচ ও নিকাশের সুবিধা হবে এবং নিড়ানিসহ সারের পার্শ্ব প্রয়োগ সহজ হবে।
৭. কাঁকরোল ও ধুন্দল চারার গোড়ায় যাতে পানি জমতে না পারে সেজন্য দুই মাদা পর পর সারি টেনে নালা কেটে মাটি তুলে বেড করে দিতে হবে। মাটিতে চটা ধরলে সাথে সাথে ভেঙ্গে ঝুরঝুরে করে দিতে হবে।
৮. মাদায় আগাছা জন্মালে নিড়ানি দিয়ে উঠায়ে মাটি আলগা করে দিতে হবে।
৯. মাটি শুকনো হলে বা বৃষ্টিপাত না হলে অবস্থা বুঝে প্রয়োজনে ১০ দিন পর পর হালকা করে সেচ দিতে হবে।
১০. রোগ পোকার আক্রমণ যাতে না হতে পারে সেজন্য কপার মিশ্রিত ছত্রাকনাশক ও ম্যালাথিয়ন/ফেনিট্রোথিয়ন জাতীয় বালাইনাশক স্প্রে করতে হবে।
১১. যে সমস্ত কাজ করা হবে তা খাতায় লিখে রাখতে হবে।
প্রাথমিক তথ্য- শিকড়ের নাগালের মধ্যে সার প্রয়োগ করা হলে গাছ তা গ্রহণ করতে পারে। সার মাটিতে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়া করে মাটিতে আবদ্ধ হয়, পানিতে ধুয়ে/চুয়ায়ে যায়, বাতাসে উড়ে যায়। তবে সার প্রয়োগের কয়েকটি পদ্ধতি আছে। তন্মধ্যে উপরি প্রয়োগ ১টি পদ্ধতি। জমিতে দণ্ডায়মান ফসলে সার প্রয়োগ করাকে উপরি প্রয়োগ বোঝায়। তবে সহজে দ্রবণীয় বা দ্রুত গাছের গ্রহনোপযোগী পর্যায়ে যায়, এরূপ সারই একমাত্র উপরি প্রয়োগের জন্য নির্ধারিত হয়। এছাড়াও কিছু সার উপরি প্রয়োগ করা হয়। যেমন- ছাই, পচা খৈল ও গোবর, দস্তা এবং জৈব উজ্জীবক সার। উপরি প্রয়োগ কয়েকভাবে করা হয়। যথা-ছিটিয়ে, পার্শ্বে, চারপাশে, কাদার গোলকে করে, বড়ি করে, , প্রবিষ্ট করে। আবার ছিটিয়ে প্রয়োগ দু'ভাবে করা হয় (সরাসরি উপর থেকে ছিটিয়ে এবং পাতায় স্প্রে করে)। ফসল বপন/রোপণ (চারা বা বীজ ছিটিয়ে/সারিতে/মাদাতে) কীভাবে করা হয়েছে তার ওপর সারের পরিমাণও দক্ষভাবে প্রয়োগ নির্ভর করে।
প্রয়োজনীয় উপকরণ
১। তরল, দানাদার ও পাউডার সার, ২। ডালা ৩। স্প্রে মেশিন, ৪। সার মাপার যন্ত্র ৫। কাঠি ৬। নিড়ানি, ৭। কোদাল ৮। খাতা কলম
কাজের ধাপ ১. বিভিন্ন ধরনের সার নিতে হবে।
২. ৩৩ নং ব্যবহারিক পাঠে সবজিতে সার প্রয়োগের পরিমাণ ও সময় উল্লেখ আছে তা দেখে নিতে হবে।
৩. রাসায়নিক সার ঘন মাত্রার সার। তাই শেকড়ের সাথে যাতে না লাগে সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।
৪. মাটিতে রস না থাকলে সার দেয়া উচিত হবে না। মাটির রস পরীক্ষা করে নিতে হবে।
৫. বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে বা গাছের পাতা ভেজা থাকলে সে সময় সার দেয়া উচিত নয়। সার প্রয়োগের আগে মাঠ পরিদর্শন ও আবহাওয়ার অবস্থা দেখে নিতে হবে।
৬. সার উপরিপ্রয়োগ হিসেবে যে পদ্ধতিতেই দেওয়া হাকে, তা মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
৭. প্রখর রোদের সময় সার উপরি প্রয়োগ করা উচিত নয়। সার প্রয়োগের আগে সূর্যের প্রখরতা দেখে নিতে হবে।
৮. সকল অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে খাতায় লিখতে হবে।
প্রাথমিক তথ্য- রোগজীবাণু উদ্ভিদের শরীরে প্রবেশ করে কোষ নষ্ট করে ও খাদ্যরস গ্রহণ করে। এতে উদ্ভিদের অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়, যা রোগের লক্ষণ হিসেবে প্রকাশ পায়। যেমন-গোড়া পঁচা, পাতার দাগ, ক্ষ্যাব, পাউডারি মিলডিউ, মোজাইক, শুকনা পঁচা ইত্যাদি।
প্রয়োজনীয় উপকরণ
১। রোগের নমুনা, ২। চাকু ৩। আতশীকাঁচ ৪। ট্রে, ৫। ফরসেপ ৬। খাতা পেন্সিল ।
কাজের ধাপ
১. রোগের বর্ণনা দেখে জমিতে গিয়ে ফসলের সাথে মিলিয়ে দেখতে হবে।
২. নমুনা সংগ্রহের সময় খুব সাবধানে চাকু/কাঁচি দিয়ে কেটে ট্রেতে নিতে হবে।
৩. সংগৃহীত নমুনাটি ছায়ায় রেখে সতেজ থাকা অবস্থায় রোগের লক্ষণ দেখতে হবে।
গাজর | স্ক্যাব | গাজরের গায়ে বিভিন্ন আয়তন ও আকৃতির গুটি বসন্তের ন্যায় দাগ সৃষ্টি হয়। কোনগুলো অগভীর, কোনগুলো ভাসা অবস্থা। দাগের কিনারা অসমান, মাঝে মাঝে অনেকগুলো দাগ একত্রে হয়ে বড় আকার ধারণ করে। আক্রান্ত স্থানে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। |
কাঁকরোল | পাউডারি মিলডিউ | আক্রান্ত পাতার উপর সাদা সাদা পাউডারের গুড়ার ন্যায় পদার্থ | বিদ্যমান। এই সাদা গুড়ো দ্বারা আবৃত থাকে। বয়স্ক পাতায় বেশি | দাগ বিলম্বে বাদামী রঙ ধারণ করে। আক্রমণের তীব্রতায় পাতা মারা যায়। |
ধুন্দল | ঐ | ঐ |
কাঁকরোল | মোজাইক | পাতায় হলদে ও গাঢ় সবুজ রঙের ছাপে ছোট ছোট মিশ্রণ সৃষ্টি হয়। তীব্র আক্রমণে পাতা হলদে হয়ে যায় এবং শিরা নিচের দিকে কুঁকড়ে বেঁকে যায়। ফুল ও ফল ধরা কমে যায় এবং ফলের বিকৃতি ঘটে । |
পুঁইশাক | পাতার দাগ | পাতায় বাদামি দাগ পড়ে। দাগগুলে গোলাকার ও তার কিনারা উজ্জল লাল বর্ণের হয়। পরবর্তীতে দাগের মধ্যে শুকিয়ে ছিদ্র হয়ে যায়। |
গীমা কলমি | গোড়া পচা | |
লতিরাজ কচু | পাতার মড়ক | পাতার উপর বেগুনি হতে বাদামি রঙের গোলাকার দাগ পড়ে। পরে দাগ বৃদ্ধি পেলে পাতা ঝলসে যায়। ৩-৪ দিন বৃষ্টিতে এর মাত্রা দ্রুত বিস্তার লাভ করে। |
মুখী কচু | শুকনা পচা | আক্রান্ত মুখী কচুর খোসা একটু ডাবা, আক্রান্ত স্থান শুকনা ও শক্ত, | কুঁচকানো হয়। কুচকানো স্থানে ফাঁপা হয়। |
৪. রোগের লক্ষণের সাথে নমুনা দেখে মিলিয়ে তা চিহ্নিত করে খাতায় বর্ণনাসহ লিখতে হবে।
৫. প্রতিটি সবজির নমুনা রোগের লক্ষণের সাথে মিলিয়ে খাতায় লিখতে হবে।
৬. নমুনাগুলোকে রোগের লক্ষণের সাথে মিলানোর পর তা পুঁতে/পুড়ায়ে নষ্ট করতে হবে।
প্রাথমিক তথ্য- রোগের আক্রমণে সবজির ফলন হ্রাস পায় এবং গুণগত মান কমে যায়। ফসলের রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন ধরনের রোগনাশক সরকার রেজিষ্ট্রেশন প্রদান করে থাকে যা বিভিন্ন কোম্পানী বাজারজাত করছে।
প্রয়োজনীয় উপকরণ
১. রোগনাশকের প্যাকেট বা বোতল
২. মাপার যন্ত্র
৩. চামচ
৪. পানি
৫. স্প্রেয়ার/ডাষ্টার
৬. বালতি
৭. হ্যান্ড গ্লোবস
৮. মাক্ষ
৯. ছোট সাদা কাগজ
১০. গামবুট
১১. এ্যাপ্রোন
১২. চশমা
১৩. বিকার/সিলিন্ডার/পিপেট
কাজের ধাপ
রোগনাশক শনাক্তকরণ
১. রোগনাশকের প্যাকেট/বোতল র্যাকে/ টেবিলে এমনভাবে সাজিয়ে রাখুন, যাতে টেবিলের সামণে দাঁড়ালে সহজে প্যাকেটে/বোতলের লেখা দেখা যায়।
২. রোগনাশক নাড়াচাড়ার আগে মাক্স, হ্যান্ড গ্লোবস, গামবুট, এ্যাপ্রোন ও চশমা পরতে হবে।
৩. লেবেল কোন রোগের জন্য ব্যবহার করা যাবে তা দেখে নিতে হবে।
৪. লেবেলে রোগনাশক ব্যবহারের মাত্রা লেখা থাকে তা ভালোভাবে দেখে নিতে হবে।
৫. প্যাকেট/বোতলের লেখা পড়ে, তার নাম, ভৌতিক অবস্থা ও রঙ পর্যবেক্ষণ করে খাতায় লিখতে হবে।
৬. লেবেলে কোন রোগের জন্য ব্যবহার করা যাবে তা দেখে নিতে হবে। লেবেলে রোগনাশক ব্যবহারের মাত্রা লেখা থাকে তা ভালোভাবে দেখে নিতে হবে।
রোগনাশকের মাত্রা নির্ধারণ
১. প্যাকেটের বোতলের গায়ে লেখা মাত্রা দেখে ব্যালেন্স / বিকার/ সিলিন্ডারের সাহায্যে মেপে নিতে হবে। পাউডার/দানাদার হলে ব্যালেন্সের ওপর সাদা কাগজ দিয়ে তাতে রোগনাশক ওজন করে নিতে হবে তরল হলে পিপেট/দাগ কাটা সিলিন্ডার/ড্রপার দ্বারা রোগনাশক মেপে নিতে হবে।
২. রোগনাশক মাপার পরে বালতিতে নির্দেশনা মোতাবেক পরিষ্কার পানি নিয়ে তাতে রোগনাশক ঢালতে হবে। তারপর বাঁশের/কাঠের লাঠি দিয়ে নাড়াচাড়া করে মেশাতে হবে।
৩. বালতিতে রোগনাশক মিশ্রিত পানি স্প্রেয়ার মেশিনে সাবধানে ঢেলে মুখ বন্ধ করে পাম্প করতে হবে।
রোগনাশক দক্ষভাবে ব্যবহার
১. রোগনাশক ব্যবহারের জন্য মাপা, মিশ্রণ তৈরি, স্প্রেয়ারে ঢালা ইত্যাদি কাজ করার পূর্বে গামবুট, এ্যাপ্রোন, মুখোশ ও হ্যান্ড গ্লোবস পরতে হবে।
২. এ্যাপ্রোন না থাকলে গায়ের স্বাভাবিক কাপড়ের উপর ঢিলে-ঢালা বিশেষ তৈরি পোশাক পরতে হবে।
৩. বৃষ্টি বা মেঘলা অবস্থায় স্প্রে করা যাবে না।
৪. বাতাসের অনুকূলে স্প্রে করতে হবে।
৫. স্প্রে করার সময় স্প্রে নজল যতদূর সম্ভব নিচু করে ধরতে হবে।
৬. প্রখর রৌদ্র বা ঝড়ো বাতাসের সময় স্প্রে করা যাবে না।
৭. রোগনাশকের খালি প্যাকেট/বোতল মাটিতে পুঁতে রাখতে হবে।
৮. স্প্রে করার পর সাবান দিয়ে হাতমুখ ধুয়ে ফেলতে হবে এবং মেশিনটি পরিষ্কার পানি দিয়ে ডাঙ্গায় রেখেই ধুতে হবে।
৯. কাজের প্রতিটি ধাপ খাতায় লিখতে হবে।
প্রাথমিক তথ্য- সবজির পোকা শনাক্তকরণের জন্য কীলিং জারসহ সবজি ক্ষেতে যেতে হবে। কলিং জার না থাকলে সাধারণভাবে হাত জাল দিয়ে বা সুইপ নেটের সাহায্যে পোকা সংগ্রহ করে সাবধানে পলিব্যাগে ঢুকাতে হবে, যাতে পোকা মাকড়ের কোন অংগ ভেঙ্গে না যায়। পোকা লাফালাফি করায় হাত-পা ভেংগে যায়, পাখা দুমড়ে মুচড়ে যায়, এন্টেনা ভেঙ্গে যায় । ফলে পোকা শনাক্ত করা কঠিন হয়ে যায়। রৌদ্রোজ্জ্বল সকালে ও বিকালে পোকা ধরা উত্তম। প্রখর সূর্যতাপ, খুব ঠান্ডা বা ঝড়বৃষ্টির সময় পোকা ধরা উচিত নয়। কেননা এ সময় পোকা ধরলে পলিথিনের গায়ে লেপ্টে যায়। তবে পোকা ধরার সাথে সাথে কীলিং জারে দেয়া সবচেয়ে ভালো।
পোকা ধরে শনাক্ত করে হার্বোরিয়াম শিটে পোকার নাম ও আক্রান্ত ফসলের নাম লিখে তার কিছুটা উপরে স্বচ্ছ টেপ বা স্বচ্ছ গাম দ্বারা পোকাকে আটকে দিতে হয়। হার্বোরিয়াম শিটে পোকা গাম দিয়ে বা ছোট ভায়ালে পুরে পেট দিয়ে আটকে দেওয়া যায়। সম্পূর্ণ হার্বোরিয়াম শিটটিতে (২৯ সেমি. × ৪২ সেমি.) পোকা স্থাপন করে সেলোফিন পেপার দিয়ে মুড়ে রাখতে হয়। তাতে বৎসরাধিককাল পোকা সংরক্ষণ করা যায়। সেলোফিন পেপার দিয়ে মুড়ানোর সময় ন্যাপথেলিন দেয়া যায়।
পোকা ধরা বা মারা অনেক রকমের ফাঁদ আছে, যার অনেকগুলোই সহজে তৈরি করা যায়। এক এক ধরনের পোকা মারা বা ধরার জন্য এক এক রকমের ফাঁদ কার্যকর। যেমন- আলোর ফাঁদ, রস ফাদ, ফেরোমোন ব্যবহৃত ফাঁদ, বিষ ফাঁদ ইত্যাদি।
প্রয়োজনীয় উপকরণ
১. পোকা ধরার হাতজাল (সুইপিং নেট) ২. স্বচ্ছ পলিথিন ব্যাগ ৩. রাবার ব্যান্ড ৪. চিমটা (ফরসেপ) ৫. কিলিং জার ৬. আতশ কাঁচ ৭. ভায়ালরাবার টিউব ৮. পাষ্টিকের ছোট গামলা ৯. সাবান গোলা পানি ১০. বিভিন্ন ফাঁদ (ফেরোমোন, বিষ টোপ) ১১. পেট্রিডিস | ১২. ওয়াচ গাস ১৩. কাঁচি ১৪. গাম ১৫. স্বচ্ছ পট ১৬. বাঁশের খুঁটি ১৭. পোকা লেবেলিং কার্ড ১৮. হার্বোরিয়াম কীট ১৯. সেলোফিন পেপার ২০. খাম (মথ রাখার জন্য) ২১. এ্যাসপিরেটর। |
১. পোকা ধরার জাল নিয়ে সবজি ক্ষেতে যেতে হবে।
২. জাল দিয়ে সুইপ করে পোকা ধরে স্বচ্ছ পলিব্যাগে বা কিলিংজারে নিয়ে তাতে ক্লোরোফর্ম দ্বারা ভেজাতুলা দিয়ে পাত্রের মুখ কিছুক্ষণ বন্ধ রেখে দিলে পোকা মারা যাবে ।
৩. এরপর পলিব্যাগ/জার হতে পোকা বের করে ওয়াচ গ্লাসের উপর রেখে প্রত্যক্ষ করে পোকাগুলোকে শনাক্ত করতে হবে।
৪. যে পোকা ছোট ও ধীর গতিতে চলে সেক্ষেত্রে এসপিরেটরের সাহায্যে পোকা ধরে ভায়ালে নিতে হবে। মথ হলে খামে পুরে নিতে হবে।
৫. হার্বোরিয়াম শিটে পোকা স্থাপনের আগে শুকিয়ে নিতে হবে। পোকা শুকাতে ৭/৮ দিন পর্যন্ত সময় লাগে । অনেক পোকা শুকানোর পর হাত পা শক্ত হয়ে যায়। তাই পেট্রিডিসে ০.৫-১.০ সেমি. পুরু ভিজা বালি দিয়ে তাতে ৩-৪ ফোটা কার্বোলিক এসিড দিয়ে ব্লটিং পেপার বিছাতে হবে। এর উপর পোকা রেখে ঢাকনা দিয়ে বন্ধ রাখলে আস্তে আস্তে পোকাটি নরম হবে। প্রজাপতি/মথজাতীয় পোকার পাখা ছড়িয়ে রাখতে হয়। সেজন্য স্প্রেডিং বোর্ডে রেখে মাথার নিচে পাখার সংযোগস্থলে (থোরাক্স) ইনসেক্ট পিন গেঁথে দিতে হবে। পাখাগুলোকে ফরসেফ দিয়ে টান করে পাখার উপর ছোট কাগজের টুকরো স্থাপন করে কাগজের দুই মাথায় পিন দিয়ে চেপে কয়েকদিন রাখতে হবে।
৬. তৈরিকৃত ও শনাক্তকৃত নমুনাগুলোকে হার্বোরিয়াম শিটে পিন/ভায়ালে টেপ লাগিয়ে/শক্ত টুকরা কাগজে গাম দিয়ে পিনে আটকিয়ে দিতে হবে। প্রতিটি নমুনার নিচে লেবেলিং করতে হবে।
পোকার নামঃ পোষাকের নামঃ সংগ্রহের স্থান
সংগ্রহের তারিখঃ সংগ্রহকারী : ফেরোমোন ফাঁদ
(ক) স্বচ্ছ প্লাষ্টিক বৈয়াম নিয়ে তার দুইদিকে ত্রিকোণাকার করে কেটে ফাঁকা করতে হবে।
(খ) বৈয়ামের ঢাকনার মাঝখানে ছিদ্র করে গুনা (তার) ঢুকিয়ে সেক্স ফেরোমোন (তুলা ও সুতা দিয়ে পেঁচিয়ে ফেরোমোনকে গুটি বানিয়ে রাবার নলের মধ্যে ভরে দিয়ে ঝুলিয়ে দিতে হবে। প্রতি গুটিতে ২০ ফোটা ফেরোমোন মাখাতে হবে।
(গ) বয়েমের নিচের অংশে ৩-৪ সেমি. সাবান মিশ্রিত পানি রাখতে হবে।
(ঘ) এভাবে তৈরি বয়েমটির যে দুইদিকে কাটা নেই সেদিকে দুটি বাঁশ দিয়ে বেঁধে দিতে হবে। এভাবে বানানো ফাঁদে পোকা আকৃষ্ট হয়ে পানিতে পড়ে মারা যাবে।
(ঙ) ফাঁদ প্রধানত বেগুন ক্ষেতে বেশি ব্যবহৃত হয়। এক্ষেত্রে শুধু পুরুষ মাছিই আকৃষ্ট হয় এবং মারা যায়।
৭. বিষটোপ
(ক) লাউ, কুমড়া, করলা, কাঁকরোল, ঝিঙ্গা, চিচিংগা, ধুন্দল, খিরা, পটলজাতীয় ক্ষেতে ফলের মাছি পোকা দমনের জন্য নির্বাচন করতে হবে।
(খ) ছোট মাটির সানকি বা নারকেলের মালায় ১০০ গ্রাম পাকা মিষ্টিকুমড়া (কুচি কুচি করে কেটে তা থেঁতলে ও পিষে) কাই করে নিতে হবে।
(গ) কাই করা মিষ্টি কুমড়ার সাথে ১২ ফোটা ডিডিভিপি/সামান্য ডিপটেরেক্স নিয়ে ৫০-১০০ মিলি পানি দিতে হবে।
(ঘ) ৩-৪টি গিটওয়ালা বাঁশ নিয়ে উপরের ১-২ টা গিট পর্যন্ত সমানভাবে ৩ ভাগে ফাঁড়তে হবে।
(ঙ) বাঁশটি সবজি ক্ষেতে মাচার চাইতে অন্তত ১৫-২০ সেমি. উঁচু করে পুঁতে ফাঁড়া মাথা ফাঁক করে বিষ মিশ্রিত সানকিটি সেখানে বসাতে হবে।
(চ) সানকিটি যাতে পড়ে না যায়, সেজন্য সুতলি দিয়ে ফাঁড়া বাঁশের মাথা টান করে বেঁধে দিতে হবে। এরপর বাঁশের মাথার উপর একটা ঢাকনা দিতে হবে, যাতে বিষটোপের পাত্র ও ঢাকনার মধ্যে অন্তত ১০ সেমি. ফাঁক থাকে।
(ছ) বিষটোপ শুধু পুরুষ মাছির তুলনায় স্ত্রী মাছি বেশি আসে। স্ত্রী মাছিরাই এসব সবজিতে ডিম পেড়ে নষ্ট করে । তাই স্ত্রী মাছি মারা গেলে সবজি ক্ষেত রক্ষা পায় ।
(জ) কাজের প্রতিটি ধাপ খাতায় লিখতে হবে।
প্রাথমিক তথ্য হরমোন- ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য নতুন ও আধুনিক কলাকৌশলের মধ্যে হরমোনের ব্যবহার ও হাইব্রিড বীজ ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি। হরমোন এক প্রকার জৈব রাসায়নিক পদার্থ, যা উদ্ভিদে কিছু কিছু স্থানে অল্প পরিমাণে উৎপন্ন হয় এবং সমস্ত শরীরে প্রবাহিত হয়ে শরীরবৃত্তীয় অনেক প্রকারের কাজ করে থাকে। হরমোন উদ্ভিদের বর্ধনশীল অংশে অর্থাৎ কাণ্ডের শীর্ষে, মুলের অগ্রভাগে এবং যেখান হতে শাখা প্রশাখা উৎপত্তি হয় সে সমস্ত স্থানের কোষে একপ্রকার বৃদ্ধিকারী পদার্থ (হরমোন নিঃসৃত হয় ।
হরমোন কৃষি ক্ষেত্রে ফসলের বৃদ্ধি ও পুষ্টি ঘটায়।
যেমন- ১. গাছের কলমে নতুন মূল গজাতে সাহায্য করে।
২. ক্যামবিয়াম স্তরের সৃষ্টি করে ও শাখা প্রশাখা বিস্তারে সহায়তা করে।
৩. গাছের ক্ষতস্থান পূরণে সাহায্য করে।
৪. আগাছা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
৫. আলুর দ্রুত অঙ্কুরোদগম বিঘ্নিত করে।
৬. দ্রুত পুষ্প ধারন ও ফলে পরিণত হতে সাহায্য করে।
৭. গাছে শস্য ধারন ক্ষমতা বাড়ায়।
উদ্ভিদের বৃদ্ধি, প্রজনন, ফুল, ফল ধারণ ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ হয় যে সমস্ত জৈব রাসায়নিক পদার্থ দ্বারা তা হলো- (ক) অক্সিন (খ) জিবারেলিন গ) কাইনিন বা সাইটোকাইনিন, ঘ) ডরমিন ঙ) ইথিলিন ।
হাইব্রিড- বৈসাদৃশ্যমূলক গুণসম্পন্ন দুইটি একই জাতীয় ফসলের মধ্যে সংকরায়ন করে প্রথমে এমন এফ-১) উদ্ভিদ পাওয়া যায়, যার গুণাবলি হবে উন্নত ধরনের। যেমন- সতেজ, পীড়ন সহিষ্ণুতা, ফলন ও
দানার গুণ বেশি ইত্যাদি। যখন এফ-১ উন্নত ধরনের হয় তখন তাকে শংকর সাবল্য বলে। শংকর সাবল্য প্রকাশ করা হয়, সেই ফসলের ফলন, গাছের বৈশিষ্ট্য, ফলের সংখ্যা ও আকার ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে।
প্রয়োজনীয় উপকরণ
১। হরমোন ২। কাঁচি/চাকু ৩। বিভিন্ন ধরনের সবজির ক্ষেত ৪। স্প্রে মেশিন ৫। বালতি ৬। পানি ৭। হাইব্রিড বীজ কাজের ধাপ
হরমোন
১. ফসলের ধরন (পাতাজাতীয়, ফলজাতীয়, কন্দজাতীয়) অনুসারে হরমোন নির্ধারণ করতে হবে।
২. উদ্ভিদের শেকড় গজানোর কাজে, ফুল থেকে ফল ধারনের কাজে, আগাছা নিধনে অক্সিন হরমোন প্রয়োগ করতে হবে।
৩. দ্রুতবর্ধনশীল কাণ্ডের অগ্রভাগ ভেংগে বা কেটে দিলে তার নিচের অংশে অক্সিন ক্রিয়াশীল হয়ে অনেক মুকুল ও শাখা গজায়ে দিবে। এ কাজটি লতানো সবজিতে, টমেটো, পেঁপে গাছের মাথা কেটে বা ভেঙ্গে দিয়ে প্ৰমাণ করা যাবে।
৪. গাছের বৃদ্ধি ধীর হলে হরমোন জিবারেলিন ব্যবহার করে গাছকে দীর্ঘ ও অনেক বড় আকার করা যাবে। বীজ অঙ্কুরোদগম ও গাছের সুপ্তাবস্থা দূর করতে এটি ব্যবহার করা যাবে।
৫. উদ্ভিদের মূল উন্নত করতে বেশি পরিমাণ অক্সিন ও অল্প পরিমাণ কাইনিন ব্যবহার করতে হবে।
৬. মুকুল ও বীজের সুপ্তাবস্থা দূর করে, স্বল্প দিবসীয় গাছের ফুল ফোটা ত্বরান্বিত করার জন্য ডরমিন হরমোন ব্যবহার করতে হবে।
৭. ছায়াতে জন্মানো চারায় ইথিলিন চারাকে স্ফীত করে। ফুল ফোঁটাতে ও ফল পাকাতে ইথিলিন ব্যবহার করা যাবে।
হাইব্রিড বীজ
১. হাইব্রিড বীজ বপন। রোপণের জন্য নির্দিষ্ট সময় জেনে নিতে হবে। কেননা বৃদ্ধি পর্যায়ে, ফুল ফেঁটা, ফল ধারন ইত্যাদি পর্যায়ে নির্দিষ্ট তাপমাত্রা না থাকলে ফলনে ভীষণ প্রভাব পড়বে ।
২. হাইব্রিড বীজ ব্যবহার করে উৎপাদন বাড়াতে হলে মাটি খুব উর্বর হতে হবে।
৩. হাইব্রিড বীজ দ্বারা ফসল জন্মানোর পর সেই ফসল হতে পরবর্তীতে ব্যবহারের জন্য বীজ হিসেবে রাখা যাবে না।
৪. হাইব্রিড বীজ ব্যবহার করে ফসল ফলাতে হলে সকল ধরনের পরিচর্যা সঠিকভাবে সঠিক সময়ে করতে হবে, অন্যথা ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
৫. সব কাজগুলো ধারাবাহিকভাবে খাতায় লিখতে হবে।
আরও দেখুন...